শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষন ও করণীয়।
আপনার শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতা থাকতে পারে। কিন্তু অনেকেই জানেনা শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষন ও করনীয় সম্পর্কে। এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানবো- শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারন, শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষন ও করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত।
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০-৯৮% থাকে। তবে তা ৯০% এর নিচে নেমে আসলে তা মারাত্বক ঝুঁকির সৃষ্টি করে থাকে। চলুন জেনে নেই অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারন।
শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারন।
শরীরে নানা কারনে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। তবে এটি কোন রোগ নয় একটি উপস্বর্গ মাত্র। কিন্তু অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিলে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা নিতে হয়। শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার কিছু প্রধান কারন হলো-
১) ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমান কমতে থাকে।
২) অ্যাজমা বা হাঁপানি থাকলে কোন কারনে উত্তেজিত হলে শ্বাসনালী অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং শরীরে অক্সিজেনে পরিমান কমতে থাকে।
৩) অ্যানিমিয়া রোগের ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান কমে যায়। আর হিমোগ্লোবিন রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে। তাই এই রোগের ফলে হিমোগ্লোবিন কমে রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়।
৪) শ্বাসনালিতে খাবার আটকে গেলে রকে অক্সিজেন কমতে থাকে।
৫) বদ্ধ পরিবেশে বসবাস করলে ধীরে ধীরে হাইপক্সিয়া হয়।
৬) যাদের হার্টে ব্লক আছে তাদের শরীরে অক্সিজেন কমে যায়।
৭) করোনা ভাইরাস ও অন্যান্য ক্ষতিকর ভাইরাসের ফুসফুসে আক্রম্নের ফলেও শরীরে রক্ত সরবরাহ কমতে থাকে।
এছাড়াও এনার্জি জনিত সমস্যা ও অন্যান্য রোগের প্রভাবেও শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়। চলুন জেনে নেই- শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষন ও করনীয় কি কি।
শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষন।
মস্তিষ্ক ও শরীরের অন্যান্য অংশ অক্সিজেনের উপর প্রখর ভাবে নির্ভরশীল। তাই অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিলে শরীরে নানারকম প্রভাব পরে। অক্সিজেনের মাত্রা ৯০% এর চেয়ে কমে গেলে কয়েকটি উপসর্গের মাধ্যমে তা চিহ্নিত করা যায়-
১) শ্বাসকষ্ট অনুভবঃ- অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিলে প্রাথমিকভাবে শ্বাস নিতে কিছুটা কষ্ট হয়। এমন অবস্থায় ঘন ঘন শ্বাস নিতে হয় ও বুকে শ্বাসের উপস্থিতি সম্পূর্ণ মনে হয় না। বেশি সময় ধরে শ্বাস বুকে ধারন করে রাখতে কষ্ট হয়। মিনিটে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিমান ১২-২০ হলেও এমন অবস্থায় তা ২৫ এর উপরে চলে যায়। এমন হলে বুঝতে হবে শরীরে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে।
২) মাথা ঘোরানোঃ- শরীরের অক্সিজেন সংকটে মাথা ঘোরায় এবং নিজেকে চেতনাহীন মনে হয়। এসময় শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখা যায় না। বারবার হামি আসে এবং বুকে শ্বাস হালকা অনুভূত হয়।
৩) দৃষ্টিশক্তি হ্রাসঃ- অক্সিজেন সরবরাহ কম হলে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। চোখ খুলে রাখতে কষ্ট অনুভূত হয়।
৪) সায়ানোসিসঃ- শরীরের বেশ কয়েকটি অংশ যেমন- নখের নিচে, ত্বক ও ঠোঁট নীলাভ বর্ন ধারন করে অক্সিজেন স্বল্পতার ফলে।
৫) মাথাব্যাথা ও ঝিমঝিম করাঃ- অক্সিজেন কম থাকলে ব্রেনে অক্সিজেন কম পৌঁছায়। ফলে মাথা ঘোরানোর সাথে সাথে মাথাব্যাথা ও মাথা ঝিম ঝিম করে।
৬) রক্তচাপ বৃদ্ধিঃ- রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিলে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।
৭) বিভ্রান্ত হওয়াঃ- অক্সিজেনের পরিমান কমে গেলে সাধারন বিচার-বিশ্লেষণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে মনোযোগ ঠিক থাকেনা ও সচেতনতা কমে যায়।
শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষন ও করনীয় সম্পর্কে উপরোক্ত লক্ষনগুলো থেকে কোন একটি বা একাধিক দেখা দিলে শরীরের অক্সিজেনের পরিমান পরীক্ষা করে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
শরীরে অক্সিজেন সংকট দেখা দিলে করণীয়।
কেউ যদি শরীরে অক্সিজেনের অভাব অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসা সেবা নেওয়া জরুরি। চিকিৎসা সেবার আগে প্রাথমিকভাবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে-
১) খোলামেলা পরিবেশে অবস্থানঃ- আপনি যদি এমন কোনো এলাকায় থাকেন যেখানে বাতাসের গুণমান কম বা অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি ভাল-বাতাসবাহী এলাকায় যান। বায়ু সঞ্চালন বাড়াতে জানালা এবং দরজা খুলুন, এবং চারপাশে বাতাস সরাতে সাহায্য করার জন্য একটি ফ্যান চালু করুন। এতে হালকা অনুভূত হবে ও শ্বাস নিতে সুবিধা হবে।
২) পোশাক ঢিলে করাঃ- শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আটসাট পোশাক ঢিলে করে দিতে হবে। প্যান্ট, বেল্ট অন্তর্বাস হালকা করে দিতে হবে।
৩) তাড়াহুড়ো না করাঃ- অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিলে তাড়াহুড়ো করলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং তা আরও বিপজ্জনক পর্যায়ে যেতে পারে। স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কম অক্সিজেনের মাত্রার লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। শান্ত এবং ফোকাস থাকার চেষ্টা করুন।
৪) শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামঃ- গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। আপনার নাক দিয়ে ধীরে ধীরে, গভীর শ্বাস নিন এবং আপনার মুখ দিয়ে বের করুন, সম্পূর্ণরূপে শ্বাস ছাড়তে ভুলবেন না।
৫) পরিপূরক অক্সিজেন ব্যবহার করুনঃ- সম্ভব হলে পরিপূরক অক্সিজেন ব্যবহার করুন। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করার জন্য সম্পূরক অক্সিজেন সরবরাহ করে। এটি একটি অক্সিজেন মাস্ক বা অনুনাসিক ক্যানুলার মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে।
মনে রাখবেন, শরীরে অক্সিজেনের অভাব একটি গুরুতর চিকিৎসা জরুরী, এবং অবিলম্বে চিকিৎসা সেবা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।
- শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার।
- হাত পা জ্বালা পোড়া করার কারণ ও প্রতিকার।
- ড্রাগ এর নিশা ছাড়ার উপায়।
শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা সর্বদা স্বাভাবিক রাখতে কিছু করনীয়।
সর্বদা সুস্থ শরীর পেতে দৈনন্দিন জীবনে কিছু বিষয় মেনে চলতে হয়ঃ-
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করা। এতে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান বাড়বে ও শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকবে।
- ধূমপান এড়িয়ে চলা।
- বেশি পরিমানে পানি পান করা।
- ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীরের রক্ত চলাচলকে স্বাভাবিক রাখা।
- নিজেকে খুব উত্তেজিত না করা।
শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষন ও করনীয় সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞেসিত প্রশ্নোত্তর।
শরীরে অক্সিজেন কমে গেলে কি হয়?
শরীরে অক্সিজেন কমে গেলে মাথা ঘুড়ানো, মাথা ঝিমঝিম করা, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসা, শ্বাসকষ্ট অনুভূত হওয়া, ত্বক, ঠোঁট নিলাভ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
একজন মানুষ দৈনিক কত লিটার অক্সিজেন গ্রহন করে?
একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষ দিনে প্রায় ৫৫০ লিটার অক্সিজেন গ্রহন করে।
শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কত থাকা স্বাভাবিক?
একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা থাকে ৯০-৯৮%। কিন্তু ৯০% এর চেয়ে কমে গেলে তা ক্ষতিকর হতে পারে।
রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করে কি?
লোহিত রক্তকনিকা রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখে।
গুরুত্বপূর্ণ কথা।
শরীরে হঠাৎ করেই উক্ত সমস্যায় পতিত হতে পারেন যে কেউ। তাই অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষন ও করনীয় সম্পর্কে সকলেরই পূর্ব সচেতনতা থাকা উচিৎ। তবে তা খুব বেশি কমে গেলে দ্রুত ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে।
আজকে আমাদের মূল বিষয় ছিলো শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষন ও করনীয়। আপনারা এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলেন- শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষন ও করনীয়। সচেতনতা বৃদ্ধিতে পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন আপনার বন্ধুদের সাথে। পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে ভূলবেন না, ধন্যবাদ।
এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।