শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার।
শরীর শুকিয়ে যাওয়া নিয়ে ভুগছেন অনেকেই। তাই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার সম্পর্কে। চলুন এই পোস্টের মাধ্যমে জেনে নেই- শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার পেতে করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত।
শরীরের অযত্ন ও কিছুটা চাপের কারনে কমবেশি শরীর শুকাতে পারে। তবে যদি ৬ মাস থেকে ১২ মাসের মধ্যে কারো শরীরের ওজন ৫ কেজি পর্যন্ত কমে যায় তাহলে তা কোন কঠিন বিপদের আসঙ্কা হতে পারে।
শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারন।
শরীর শুকিয়ে যাওয়া একটি দুশ্চিন্তার কারন। অতিরিক্ত ওজনের মানুষ চেষ্টায় থাকে কিভাবে একটু ওজন কমানো যায় । কিন্তু ডায়েট কিংবা Exercise ছাড়া হঠাৎ অকারনে শরীর শুকিয়ে যাওয়া হতে পারে কোন বড় রোগের লক্ষন। বেশ কয়েকটি কারনে শরীর শুকিয়ে যেতে পারে। চলুন জেনে নেই বিস্তারিত-
(১) অভারঅ্যাক্টিভ থাইরয়েড- অভারঅ্যাক্টিভ থাইরয়েড বা আন্ডারঅ্যাক্টিভ থাইরয়েডের কারনে মানবদেহে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। থাইরয়েড একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যা বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে থাকে। শরীরে অনেক বেশি বা অনেক কম থাইরয়েড হরমোনের সৃষ্টি হলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, ক্ষুদা বেশি লাগে এবং শরীর খুব বেশি শুকিয়ে যায়।
(২) রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস- এটি শরীরের একটি অটো ইমিউনি ডিজিজ। এর ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। হাত ও পায়ের আঙ্গুলের অস্থিসন্দি এবং শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যাথার সৃষ্টি হয় এ রোগের ফলে। এতে খুব দ্রুত শরীরের ওজন কমতে থাকে।
(৩) ডায়াবেটিস- বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ঝুকিবহুল রোগ ডায়াবেটিস। ৩০ বছরের নিচে মানুষদের অনেকেরই টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসের ফলে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন কমে যায়। যার ফলে খাবারে থাকা গ্লুকোজ শরীর কাজে লাগাতে পারেনা। ফলে শরীর দ্রুত শুকাতে থাকে।
(৪) ডিপ্রেশন- ডিপ্রেশনে থাকা ব্যক্তির মানসিক চাপ অনুভত হওয়ায় শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমের সক্রিয়তা কমে যায়। ডিপ্রেশনের ফলে শরীরে নানান রোগের সূচনা হয়। যেমন- শ্বাসকষ্ট, মাথাঘোরা, ক্ষুদামন্দা, বুকে ব্যাথা ইত্যাদি করনের ফলে শরীর খুব দ্রুত শুকাতে থাকে।
(৫) প্রদাহজনিত পেটের রোগ- পেটে অন্ত্রের বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগের কারনে শরীরের ওজন কমে যায়। এ রোগের ফলে অন্ত্রে কেটাবলিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় ঘেরলিন (ক্ষুদার হরমোন) ও লেপটিন (তৃপ্তির হরমোন) কমতে থাকে। এবং ডায়রিয়া, রক্ত আমাশয়সহ সমস্যা দেখা দেয়। ফলে ক্ষুদামন্দা ও খাবারে অতৃপ্তি অনুভুত হয় ও ওজন কমতে থাকে।
(৬) এন্ডোকার্ডাইটিস- এ রোগের ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে রক্ত প্রবাহের সাথে মিশে যায় এবং হৃৎপিন্ডের ক্ষতি করে। এ রোগ সুস্থ হার্টে আঘাত করতে পারেনা তবে ক্ষতিগ্রস্ত হার্টে আক্রমন করে। এ রোগে জ্বর হয় ও শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে থাকে। এতে বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পায় ও চর্বি কমে ওজন হ্রাস পায়।
(৭) HIV- এটি একটি মরনব্যাধী। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে খুব সহজেই নানা রোগ আক্রমন করতে পারে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। HIV শরীরে প্রভাব বিস্তারের ফলে শরীরের সকল কর্মক্ষমতা লোপ পায় ও শরীর শুকিয়ে যায়।
(৮) ক্যান্সার- আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে- পাকস্থলী, ফুসফুস, খাদ্যনালীর ক্যান্সারের ফলে শরীরে খুব দ্রুত ৫ কেজির বেশি ওজন কমতে থাকে। এ ধরনের ক্যান্সারে শরীরের পেশি ও খাদ্যের ক্যালরির ক্ষয় বাড়িয়ে দেয় এবং শরীর শুকিয়ে যায়।
এছাড়াও হরমোনজনিত রোগ, যক্ষ্ণা, ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারনেও শরীর শুকিয়ে যায়। উপরোক্ত আলোচনায় জানতে পারলাম শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারন। প্রতিকার সম্পর্কে করনীয় বিষয়গুলো চলুন জেনে নেই-
শরীর শুকিয়ে যাওয়া রোধে করনীয়।
শরীর শুকিয়ে যাওয়া হতে পারে কোন বড় রোগের লক্ষন। তাই প্রথমেই যদি তা প্রতিরোধ করা না হয় ভবিষ্যতে তা বড় আকার ধারন করতে পারে। দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন মাধ্যমে এ সমস্যার প্রতিকার করা যায়-
(১) পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহনঃ- পুষ্টিকর খাদ্য শরীরের সার্বিক উন্নয়নে সহায়তা করে থাকে। দেহের জন্য উপকারী কোষ গঠন করা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য নিয়মিত রঙিন শাকসবজি, পুষ্টিকর পাকা ফল, সামুদ্রিক মাছ, মাংস, দুধ, মাখন, ঘী, বিভিন্ন ফসলের দানাজাতীয় খাবার, সোডা, কফি, ফ্লাক্সসিড, স্যামন, টুনা, ব্রকলি, বাদাম ইত্যাদি বেশি খেতে হবে। তবে ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
(২) পর্যাপ্ত পানি পানঃ- মানব শরীরের অভ্যন্তরীণ সকল কর্ম নিয়ন্ত্রনে পানির ভূমিকা অনেক বেশি। পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করলে শরীরের ক্ষতিকর জীবানু আক্রান্ত কোষগুলো বেড়িয়ে যায়। এছাড়া শরীরকে সজীব রাখা, ক্ষুদামন্দা দূর করা ইত্যাদি কাজে পানির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।
(৩) পর্যাপ্ত ঘুমঃ- ঘুম মানব মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী ঠিক রাখে। গবেষনা থেকে জানা যায় ঘুম সুস্বাস্থ্য গঠনে সহায়তা করে। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলো যেমন- সীমেন ও রোগ প্রতিরোধী কোষগুলো ঘুমানোর সময় সবেচেয়ে বেশি কাজ করে।
(৪) দুশ্চিন্তাহীন জীবনযাপনঃ- দুশ্চিন্তা কিডনি, হৃৎপিন্ড, ব্রেন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত করে। দুশ্চিন্তা শরীর শুকিয়ে যাওয়ার অন্যতম বড় কারন। তাই চিন্তামুক্ত থাকলে চেষ্টা করলে শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়। পৃথিবীর প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মানসিক চাপের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই চিন্তামুক্ত হাস্যোজ্জ্বল জীবন পরিচালনা করতে হবে।
(৫) Healthy Lifestyle:- দৈনন্দিন চলাফেরা ও খাদ্যাভ্যাসের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। মাদক জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। রাত জাগা, দুশ্চিন্তা করা ইত্যাদি থেকে বেচে থাকতে হবে।
(৬) ব্যায়ামঃ- নিয়মিত শরীরচর্চা করার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলো সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে সহজেই চলাচল করতে পারে। এটি শরীরকে সতেজ রাখে, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে সহায়তা করে। এর ফলে পর্যাপ্ত ঘুম হয় ও ক্ষুদামন্দা দূর হয়। ফলে শরীর দ্রুত বাড়তে থাকে।
শরীর খুব দ্রুত শুকিয়ে গেলে বড় কোন রোগের সূচনা হবার আগেই শরীরের যত্ন নিতে হবে। তবে তা প্রকট আকার ধারন করলে ভালো ডাক্তারের দারস্ত হতে হবে। উপরোক্ত বিষয়গুলোই ছিলো শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার।
এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।
- মোটা হওয়ার খাবার ও মোটা হওয়ার দৈনিক রুটিন।
- ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়।
- চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায়।
শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন উত্তর।
শরীর দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ার কারন কি?
দ্দ্রুত শরীর শুকিয়ে যাওয়া বড় রোগের লক্ষন হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী অসুখ, ভূল খাদ্যাভ্যাস, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, অভারঅ্যাক্টিভ থাইরয়েড, পেটের প্রদাহজনিত রোগ, ডিপ্রেশন, এন্ডোকার্ডাইটিস, HIV ইত্যাদি মারাত্বক রোগের কারনে শরীর শুকিয়ে যায়।
ওজন বাড়ানোর উপায় কি?
পুষ্টিকর খাবার গ্রহন, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ঘুম, সঠিক জীবনব্যবস্থা, ব্যায়াম ও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়।
কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর শুকিয়ে যায়?
ভিটামিন বি-১, বি-৭, বি-১২ ও আয়োডিনের অভাবে শরীর ক্লান্ত লাগে, শরীরের নানা অংশে রোগ সংক্রমণ বাড়ে ও শরীর দ্রুত শুকিয়ে যায়।
গুরুত্বপূর্ণ কথা।
শরীর শুকানো একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও কারন ছাড়া শরীর দ্রুত শুকাতে থাকলে অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শ নিতে হবে। শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার জেনে শরীরের যত্ন নিতে হবে।
আজকের আলোচনার বিষয় ছিলো শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার। উপরোক্ত আলোচনা আমরা জানতে পেরেছি শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার সম্পর্কে। লেখাটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে ভূলবেন না, ধন্যবাদ।