মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়।
একটি সুস্থ-সুন্দর জীবন পেতে মানসিক স্বাস্থ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিত্বের সম্পূর্ন ও সুরেলা কার্যকারিতা প্রকাশ পায় সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের মাধ্যমে। তাই চলুন জেনে নেই, মানসিক স্বাস্থ্য কি?, মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব, মানসিক অসুস্থতার প্রভাব ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে।
মানসিক স্বাস্থ্য কি?
শরীর ও মনের দিক থেকে সুস্থ থেকে পরিবেশের সাথে আনন্দপূর্ন ভাবে অভিযোজনের সক্ষমতা, মনের তৃপ্তি, ইতিবাচক মনোভাব, চিন্তা, আবেগ, আচরনের সমন্বয়ই মানসিক স্বাস্থ্য। সুস্থ মানসিক অবস্থার মাধ্যমে একজন মানুষ তার সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করতে পারে।
World Health Organization (WHO)- এর মতে মানুষের স্বাস্থ্য শরীর, মানসিক ও সামাজিক এই তিনটি অবস্থার এক সুস্থ সমন্বয়। সামাজিক স্বাস্থ্য বলতে কর্মক্ষেত্রে, সামাজিক উপস্থাপনায়, লাইফস্টাইলের ইতিবাচক দিকগুলোকে বুঝায়, যা অর্জনের জন্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যই প্রধান উপকরন।
মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব।
'Health is Wealth'- স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। পৃথিবীতে সুখ-সফলতা অর্জনের জন্য সুস্বাস্থ্যের যেমন প্রয়োজন তেমনি সকল ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সক্ষমতা অর্জনে মানসিক সুস্বাস্থ্য অনেক মূল্যবান। যেমন-
- শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন।
- আত্নবিশ্বাসী হওয়া।
- ভালো সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন।
- মানসিক চাপ ও কঠিন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা।
- কঠিন অবস্থা থেকে সহজে পুনরুদ্ধার হওয়ার সক্ষমতা।
- কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মনোযোগ স্থাপন ও সফলতা অর্জন।
সুস্থ থাকা, বিজ্ঞানী মত অনুযায়ী শরীরের Immunity System ভালো হওয়ার পূর্বশর্ত হলো মানসিক সুস্বাস্থ্য। আত্নবিশ্বাসের মাধ্যমে কঠিন রোগেরও সমাপ্তি হয় কখনও কখনও সর্বোপরি সুখি জীবনের জন্য সন্তুষ্ট থাকা ও তৃপ্তির সাথে জীবনের সাধ নিতে পারা।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো হলেই জীবন হয় রঙিন। তাই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় মেনে তার যত্ন নিতে হবে।
মানসিক অসুস্থতার প্রভাব।
বিশ্বের সর্বত্রই বৃদ্ধি পাচ্ছে মানসিক অসুস্থতা। The Lancet Commission on ending Stigma and Discrimination in Mental Health - এর মতে বর্তমান বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন।
পরিবার, কর্মক্ষত্রে, সামাজিক সনস্যা, অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা, সঙ্গহীনতা, ব্যর্থতা, মনের বিরুদ্ধে যাওয়া, ভূল হলে অপরাধবোধ, সামাজিক চাপ ইত্যাদি নানা কারনে খুব সহজেই মানসিক ভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন অনেকেই। এছাড়াও জেনেটিক্স, মস্তিষ্কের গঠন ও পরিবেশের প্রভাবজনিত কারনেও মানসিক অসুস্থতা আসে। এর ফলে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়,যেমন-
Depression- বিশ্বের প্রায় ২৬৪-২৮০ মিলিয়ন মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগে। এটি একপ্রকার মনের রোগ। বিষন্নতা, উৎসাহহীনতা ও শক্তিহীনতা অনুভূত হয়।
Bipolar Disorder- পৃথিবীর প্রায় ৪৬-৫০ মিলিয়ন মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন। বাইপোলার মানে দুই মেরু। একজন মানুষের মনে অনেকসময় অতিরিক্ত উৎফুল্লতা অনুভূত হয় আবার হঠাৎই বিষন্নতা অনুভূত হয়। একইসাথে দুই ধরনের প্রভাব বিস্তার হয় মনে।
Trauma- প্রায় ২২৩ মিলিয়ন মানুষ ট্রমার অবস্থা পার করেছে জীবনে। এক্ষেত্রে মনে কোন আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে মানুষ নিস্তব্দ জীবনযাপন করে। এর থেকে রক্ষা পেতে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় জানা প্রয়োজন।
Psychosis- প্রতিবছর কয়েকলক্ষ মানুষ এই লক্ষনের স্বীকার হয় তবে এটি কোন রোগ নয়। এর অর্থ হলো মনোব্যাধী। এতে রোগীর রোগীদের বিচারবোধ, ইচ্ছাশক্তি ও কর্মক্ষমতা লোপ পায়।
Concern বা উদ্বেগ- মানুষ জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে উদ্বেগের স্বীকার হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পেশীবহুল উত্তেজনা, অস্থিরতা, ক্লান্তি এবং একাগ্রতার সমস্যা দেখা দেয়।
Suicide- প্রতিবছর পৃথিবীতে প্রায় ৭,০০,০০০ মানুষ সুইসাইড করে। যার বেশিরভাগই ১৮-২৫ বছর বয়সী। প্রেমে ব্যর্থতা, প্রতারনার স্বীকার, ফিন্যান্সিয়াল প্রবলেম, মননশীলতার অভাব ও বিষন্নতার কারনে অনেকেই পৃথিবীর প্রতি আশা, অনুভূতি হারিয়ে ফেলে। ফলে তারা সুইসাইডকেই বেছে নেয়।
মানসিক অসুস্থতা কোনদিনই মানুষকে সুস্থ-সুন্দর জীবনের স্বাদ নিতে দেয় না। তাই আমাদের সকলেরই উচিৎ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় জেনে নিজের মনের যত্ন নেওয়া।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়।
মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের জন্য কতটা মূল্যবান তা এর গুরুত্ব ও মানসিক অসুস্থতার প্রভাব থেকেই আমরা বুঝতে পেড়েছি। তাই আমাদের উচিৎ নিজের মনের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া। আশার কথা হলো শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো নির্দিষ্ট কিছু উপায়ের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করা যায়। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় -
এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।
- সোডিয়াম পটাশিয়াম জাতীয় খাবার।
- শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষন ও করণীয়।
- শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার।
শরীরচর্চা ও খাদ্যাভ্যাস।
১) শরীরচর্চা ও শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকা। 'সুস্থ দেহ সুন্দর মন'।তাই মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় শারীরিক সুস্থতা অপরিহার্য।
২) পর্যাপ্ত ঘুমানো। ঘুম মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
৩) পুষ্টিকর খাবার গ্রহন। এতে শরীরের ইমিউনিটি ব্যবস্থা ভালো হয়, শরীরে প্রফুল্লতা আসে ও মন ভালো থাকে।
৪) ধূমপান, এলকোহল ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য থেকে দূরে থাকতে হবে।
সোস্যাল কানেক্টিভিটি।
১) অন্যের সাথে সংযুক্ত থাকা। একাকীত্ব পরিহার করা।
২) সহজ উপায়ে কাজ সম্পন্ন করার জন্য সৃজনশীলতার চেষ্টা করা। কর্মক্ষেত্রে উৎপাদন হওয়া। এতে মন কর্মব্যস্ত থাকে ও আনন্দ অনুভব করে। কঠিন কাজ থেকে দূরে সরা যাবেনা।
৩) অন্যের জন্য কিছু করা চেষ্টা করতে হবে। এতে মানসিক শান্তি মেলে।
৪) প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নেওয়া। যা আপনি পাড়েন না তা নিয়ে সংকোচে না থেকে অন্যের কাছ থেকে হেল্প নেওয়া।
আত্ন মননশীল এক্টিভিটি।
১) দুশ্চিন্তা দূরে রেখে স্ট্রেস ফ্রি জীবনযাপন করা। কোন বিষয়ে খুব বেশি হতাশ না হওয়া।
২) খারাপ বা নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলার দক্ষতা সন্ধান করা।
৩) নামাজ পড়া বা মনন শীলতা অনুসরন করা। এতে জীবনের বিভিন্ন মানসিক চাপ হ্রাস পায়।
৪) যেকোন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলার সাহস রাখা।
৫) নিজের সক্ষমতা, দক্ষতা আত্নবিশ্বাস নিয়ে ভাবা। এতে মানসিক চাপ কমে যায় ও মন সতেজ থাকে।
মনের প্রতি যত্নশীলতা।
১) নিজের প্রতি সচেতন থাকা। নিজের ছোট ছোট ভালোলাগা, মন্দ লাগার প্রতি লক্ষ রাখা। মন যেমন চায় তা সঠিকপথে অর্জন করা।
২) ভূল হলে মন খারাপ হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী না করা। অপরাধবোধে না ভোগা।
৩) ভূল স্বীকার করার সাহসীকতা। ভূল হলে তা স্বীকার করলে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
৪) বিনোদনেএ ব্যবস্থা রাখা। অবসর সময় কাটানোর চেষ্টা করা।
৫) হাসিমুখে ভালো ও মন্দ সময় পেড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
উপরোক্ত ভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়ে মনের সুস্বাস্থ্য অর্জন করা যায়।
মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর।
মানসিক স্বাস্থ্য কি?
মানুষের মনোভাব, চিন্তা, আবেগ, অনুভূতি, পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে মনের অবস্থাই হলো মানসিক স্বাস্থ্য।
বিশ্বের কতজন মানুষ মানসিক অসুস্থতায় ভূগেন?
বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন।
পৃথিবীতে কতজন মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগে?
প্রায় ২৬৪-২৮০ মিলিয়ন মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগেন।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় কি?
শরীরচর্চা করা, খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখা, সোস্যাল কানেক্টিভ থাকা ও সক্রিয়ভাবে মনের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়।
শেষকথা।
জীবনে উত্থান-পতন আসে, ভালো-খারাপ মুহূর্ত আসে। সেই পরিস্থিতিতে হার না মেনে আত্নবিশ্বাসী হয়ে মনোবলে এগিয়ে যেতে হবে। মনকে সক্রিয় রাখতে হবে। মনের পরিপুষ্টতার খেয়াল রাখতে হবে। মন সুস্থ থাকলেই জীবন সুন্দর।
এই লেখনীতে আমরা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে জানলাম। লেখাটি ভালো লাগলে এবং আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্টে করে জানান। এরকম স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য জানতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন, ধন্যবাদ।
এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।