গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়।
আপনি কি গ্যাসের সমস্যার ভূগছেন? তাহলে জেনে নিন গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে। গ্যাসের সমস্যা, যা পেট ফাঁপা নামেও পরিচিত। এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেক মানুষকে প্রভাবিত করে।
এই অবস্থা মলদ্বার থেকে বা মুখের মাধ্যমে গ্যাস নিঃসরণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। যদিও গ্যাস হজম প্রক্রিয়ার একটি প্রাকৃতিক অংশ, কিন্তু অত্যধিক গ্যাস অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর হতে পারে। সৌভাগ্যবশত, বেশ কিছু ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যা গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
ঘরোয়া উপায়ে গ্যাসের সমস্যা দূর করুণ।
(১) আদার পানিঃ- আদার প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা গ্যাসের সমস্যা উপশম করতে সাহায্য করে। আপনি আপনার খাবারে আদা যোগ করতে পারেন অথবা আদা চা পান করতে পারেন। সবচেয়ে কার্যকর ফলাফল পেতে আদা কুচি করে কেটে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই পানি ফুটিয়ে খেলে সমস্যা দূর হবে।
(২) মৌরির বীজঃ- মৌরি একটি প্রাকৃতিক কার্মিনেটিভ যা গ্যাস ও ফোলাভাব দূর করতে সাহায্য করে। মৌরি বীজ চিবিয়ে খেতে পারেন এতে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়। এছাড়া মৌরি চা পান করতে পারেন বা মৌরি সম্পূরক গ্রহণ করতে পারেন।
(৩) পেপারমিন্টঃ- পেপারমিন্ট হল সুগন্ধি জাতীয় প্রাকৃতিক উদ্ভিদ। এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যা পরিপাকতন্ত্রকে প্রশমিত করতে এবং গ্যাস উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। আপনি পেপারমিন্ট চা পান করতে পারেন বা পানিতে পেপারমিন্ট ভিজিয়ে রেখেও সেই পানি পান করতে পারেন।
(৪) ক্যামোমাইলঃ- ক্যামোমাইল একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ ও এর ফুলও ব্যবহার করা যায় যা পাচনতন্ত্রের পেশীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে এবং গ্যাসের সমস্যা দূর করে। এটিও চায়ের সাথে মিশাতে পারেন।
(৫) জিরাঃ- জিরা গ্যাসের সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। শুকনো জিরা ভেজে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই জিরা গুরো করে পানির সাথে মিশিয়ে সরবত বানিয়ে খেতে পারেন। এতে পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যাও দূর হয়।
(৬) আপেল সিডার ভিনেগারঃ- আপেল সিডার ভিনেগার একটি প্রাকৃতিক হজম সহায়ক তরল খাদ্য। আপনি এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার যোগ করে খাবার আগে পান করতে পারেন।
এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।
- স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গেলে কি কি করতে হবে।
- শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত ও কত হলে জ্বর ধরা হয়।
- শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায় ও কি খাওয়া উচিত।
(৭) অ্যাক্টিভেটেড চারকোলঃ- অ্যাক্টিভেটেড চারকোল হল একটি প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রতিকার যা পরিপাকতন্ত্রে গ্যাস শোষণ করতে সাহায্য করে। খাবারের আগে এই চারকোল সম্পূরক গ্রহণ করলে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।
(৮) টক দইঃ- টক দই হলো এক ধরনের প্রোবায়োটিক। আর প্রোবায়োটিকে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া হজমশক্তি উন্নত করে। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে ও নানা অভ্যন্তরীণ সমস্যা দূর করে। এছাড়াও আপনি প্রোবায়োটিক সম্পূরক গ্রহণ করতে পারেন বা প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন, যেমন- কেফির এবং কিমচি।
এছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়। যেমন-
(৯) ব্যায়ামঃ- নিয়মিত ব্যায়াম হজমে উন্নতি করতে এবং গ্যাস কমাতে সাহায্য করতে পারে। ব্যায়াম চাপ কমাতেও সাহায্য করতে পারে, যা গ্যাস এবং ফোলাতে অবদান রাখতে পারে।
(১০) হাইড্রেশনঃ- হাইড্রেটেড থাকা শরীরের সর্বক্ষেত্রেই উপকারী। পর্যাপ্ত পানি পান ভাল হজমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। সারাদিন প্রচুর পানি পান করুন এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন।
উপরোক্ত গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো থেকে আপনার জন্য সহজ হবে এমন একটি উপায় বেছে নিন। এই পদক্ষেপ গুলো গ্রহন করার মাধ্যমে অবশ্যই গ্যাসের সনস্যা থেকে মুক্তি অয়াবেন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। কারন, এগুলো প্রাকৃতিক উপায়।
গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞেসিত প্রশ্নোত্তর FAQ's
দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় কি?
আদা, জিরা ও মৌরির বীজ সহ চা বানিয়ে সাথে লেবুর রস যোগ করে সেই চা পান করলে দ্রুত গ্যাসের সমস্যা দূর করা যায়।
পেটের গ্যাস কমানোর খাবার কি কি?
আদার পানি, মৌরির বীজ, ডাবের পানি, জিরা, ক্যামোমাইল, পেপারমিন্ট, আপেল সিডার ভিনেগার, টক দই ইত্যাদি খাবার খেলে ও বেশি পরিমানে পানি পান করলে গ্যাসের সমস্যা কমে যায়।
গ্যাসের সমস্যা কেনো হয়?
মানুষের খাবার সম্পূর্ণ অংশ সঠিকভাবে হজম হয় না। তাছাড়া কিছু তৈলাক্ত ও বেশি ভাজাপোড়া খাবার পাকস্থলীতে সঠিকভাবে হজম হতে পারে না। সে সকল খাবার অন্ত্রে পৌছালে বিপাক ক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে পেটে গ্যাস তৈরি হয়। গ্যাস হওয়া একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার হলেও বেশি গ্যাস হওয়া বিপজ্জনক।
গুরুত্বপূর্ণ কথা।
গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে প্রাথমিক ভাবে গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো ব্যবহার করবেন। কিন্তু তারপরও যদি গ্যাসের সমস্যা চলতে থাকে বা অন্যান্য উপসর্গের দেখা দেয়, তাহলে তা বড় কোন সমস্যার লক্ষনও হতে পারে। এক্ষেত্রে সঠিক সমাধান পাওয়ার জন্য একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয় ছিলো গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কিত তথ্য। আশাকরি লেখাটি আপনাদের উপকারে আসবে। স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য দিতে পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। পোস্ট সম্পর্কিত কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভূলবেন না, ধন্যবাদ।
এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।