আহলে হাদিস সম্পর্কে রাসুল (সা.)-এর বাণী।
প্রথমে একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া প্রয়জন। কারণ আমরা যে বাণী গুলোকে রাসুল (সাঃ) এর বাণী বলছি, সত্যিয় কি সেই বাণী গুলো রাসুল (সাঃ) এর বাণী?
সব থেকে সহি ও শুদ্ধ হাদিস নামে পরিচিত বুখারি শরীফ। যদি বুখারি শরীফের হাদিস গুলো রাসুল (সাঃ) এর বাণী বলে মনে করি তাহলে বড় ভুল হয়ে যাবে।
এর প্রথম কারণ- হাদিস গ্রন্থটির নাম হছে বুখারি শরীফ, অর্থাৎ এই সমস্ত হাদিস ইমাম বুখারি নিজেয় লিপিবদ্ধ করেছে।
দ্বিতীয় কারণ- ইমাম বুখারিকে কোন ব্যক্তি বলেছে যে আমার বাপ বা দাদা বলেছেন যে আবু-হুরাইরাহ বা মা আয়েশা বা উমর ফারুক ইত্যাদি ব্যক্তি গণ বলেছে যে রাসুল (সাঃ) এই কথা গুলো বলেছেন। তাই এই সমস্ত কথা গুলো যে রাসুল (সাঃ) বলেছেন তা সন্দেহ পূর্ণ।
তৃতীয় কারণ- সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত যে সকল মানুষ রাসুল (সাঃ) এর নামে হাদিস বর্ণনা করেছেন উনাদের বিন্দু মাত্র ইঙ্গিত কুরআনের মধ্যে পাওয়া যাই না।
চতুর্থ কারণ- আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনকে হাদিস বলেছে। অর্থাৎ- কুরআনের আর একটি নাম হাদিস। নীচে আয়াতটি দেওয়া হল। ৫২ নম্বর সূরার ৩৪ নম্বর আয়াত-----
فَلۡیَاۡتُوۡا بِحَدِیۡثٍ مِّثۡلِهٖۤ اِنۡ کَانُوۡا صٰدِقِیۡنَ
ফালইয়া’তূবিহাদীছিম মিছলিহীইন কা-নূসা-দিকীন।
অতএব, তারা যদি সত্যবাদী হয় তবে তার অনুরূপ হাদিস (কুরআন) নিয়ে আসুক।
এই আয়াতে আল্লাহ্ বলছেন তোমরা যদি সত্যবাদী হয় তবে কুরআনের মত একটি হাদিস নিয়ে আস।
আহলে হাদিস সম্পর্কে রাসুল (সা.)-এর বাণী কুরআন থেকে।
প্রথমে একটি ভুল ধারণা দূর করব আর একটি সঠিক ধারণা প্রমাণ সহ আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব।
ভুল ধারণা- ৫৯ নম্বর সূরার ৭ নম্বর আয়াত থেকে উদ্ধিরিতি দেই যে --- রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।
এই কথা বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে হাদিস গ্রন্থ গুলো রাসুল (সাঃ) এর কথা, তাই হাদিস এর কথা গুলো মানতে হবে। কিন্ত আপনি যদি এই আয়াতটি সম্পূর্ণ পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন যে এখানে শরীয়তের কোন কথা বলা নেই।
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে রাসুল (সাঃ) যখন জাকাতের মাল বন্তন করছে, তখন ওই জাকাতের মাল যাকে যে পরিমানে দেই তা গ্রহণ কর আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও। আয়াতটি নীচে সম্পূর্ণ দেওয়া হল।
আল্লাহ জনপদবাসীদের নিকট থেকে তাঁর রাসূলকে ফায় হিসেবে যা দিয়েছেন তা আল্লাহর, রাসূলের, আত্মীয়-স্বজনদের, ইয়াতীমদের, মিসকীন ও মুসাফিরদের এটি এ জন্য যে, যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মাঝেই কেবল আবর্তিত না থাকে। রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।
সঠিক ধারণা- ৬৯ নম্বর সূরার আয়াত নম্বর ৪০ বলা হয়েছে- নিশ্চয়ই এটি এক সম্মানিত রাসূলের বাণী। অর্থাৎ এই কুরআন রাসুল (সাঃ) এর বাণী এতে কোন সন্দেহ নেই। আবার অনেক আলেম গণ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসুল বলতে জিব্রিল ফেরেস্তাকে বুঝিয়েছে। কিন্ত আপনি যদি এই আয়াতটির পরের আয়াত গুলো পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন যে এখানে মহাম্মাদ (সাঃ) এর জন্য বলা হয়েছে।
রাসুল (সাঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের কি বলে দেখুন।
১৩-সূরা আর-রাদ / আয়াত-৩৭-- আর এভাবেই আমি কুরআনকে বিধানস্বরূপ আরবীতে নাযিল করেছি। তোমার নিকট জ্ঞান পৌঁছার পরও যদি তুমি তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ ছাড়া তোমার কোন অভিভাবক ও রক্ষাকারী নেই।
৫-আল-মায়েদা / আয়াত-৪৯-- আর তাদের মধ্যে তার মাধ্যমে ফয়সালা কর, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রাখ যে, আল্লাহ তো কেবল তাদেরকে তাদের কিছু পাপের কারণেই আযাব দিতে চান। আর মানুষের অনেকেই ফাসিক।
রাসুল (সাঃ) সরাসরি আমাদের কি বলে দেখুন।
৪৬-সূরা আল-আহাকাফ / আয়াত-৯-- বল, ‘আমি রাসূলদের মধ্যে নতুন নই। আর আমি জানি না আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে। আমার প্রতি যা ওহী করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আর আমি একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র’।
এই আয়াতে রাসুল (সাঃ) বলছেন কিয়ামতের দিন সম্পর্কে যে- আমি জানি না আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে। আমার প্রতি যা ওহী করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আর আমি একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র’।
২৫-সুরা আল-ফুরকান / আয়াত-৩০--- আর রাসূল বলবে, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে।
কিয়ামতের দিন রাসুল (সাঃ) আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবে যে- হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে।
সমস্ত ফেরকার আলেম গণ আল্লাহর কিতাব বাদ্দিয়ে তাদের নিজেদের কিতাব থেকে শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত করে, যে গুলোর কুরআনে কোন প্রমাণ নেই। তাই আপনি আমি কি করছি সেটা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে।
কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুণ কুরআন থেকে উত্তর দেওয়া হবে ইনশাল্লাহ।
আরও পড়ুন।