হিন্দু ধর্মে বহুবিবাহ | হিন্দু ধর্মে একাধিক বিয়ে।
হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে একাধিক বিবাহ বৈধ। হিন্দু ধর্মের প্রাচীন দিকপালদের অনেকেই একাধিক বিবাহ করেছিলেন। মহামতি অর্জুনের অনেক স্ত্রী ছিল যাদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হলেন দ্রৌপদী, সুভদ্রা এবং চিত্রাঙ্গদা।
অনুরূপভাবে ভগবান কৃষ্ণের হাজারেরও অধিক স্ত্রী থাকার বর্ণনা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ঋকবেদে একটি বিয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কিছু কিছু বর্ণনায় বলা আছে- ব্রাহ্মণদের চারটি, ক্ষত্রিয়দের তিনটি, বৈশ্যদের দুটি এবং শুদ্রদের একটি বিবাহের অনুমতি দেওয়া হবে।
হিন্দু ধর্মে মহিলাদের একাধিক বিয়ে।
বিধবা বিবাহের বৈধ অথবা অবৈধ হওয়া সম্পর্কে হিন্দু ধর্মশাস্ত্রগুলোতে স্পষ্টরূপে কিছু বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে মৃত স্বামীর চিতায় তাদের জীবন্ত দাহ হয়ে যাওয়ার কিছু ঘটনার উল্লেখ বিভিন্নভাবে জানা যায়। যেমন মেঘনাদের মৃত্যুর পর তার বিধবা। স্ত্রী সুলচনা স্বামীর চিতায় সহমরণ বরণ করেছিলেন।
এই ধরনের আরো কিছু সহমরণের ঘটনার দ্বারা হয়তো হিন্দু সমাজের মধ্যে স্বামীর চিতায় বিধবাদের সহমরণের প্রথা চালু হয়ে যায়। কিন্তু এই কষ্টকর প্রথার বিরুদ্ধে হিন্দুসমাজের মধ্যে একটি নেতিবাচক চিন্তাভাবনা বরাবরই ছিল। অবশেষে ১৮১১ খ্রি. রাজা রামমোহন রায় বিভিন্নভাবে উঠে পড়ে লাগেন।
তাঁর লাগাতার প্রচেষ্টার ফল হিসাবে ১৮৬৯ খ্রি. লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক আইন করে এই সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এরই পাশাপাশি বিধবাদের পুনর্বিবাহের বিষয়টাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা আরম্ভ হয়। মনুসংহিতায় বিধবাদের পুনর্বিবাহ করতে একপ্রকার নিষেধই করা হয়েছে।
যেমন— তিনি বলেন, বিধবা মহিলাদের অবশ্য কর্তব্য হল যে তারা নিরামিষ আহার করে শরীরটাকে কমজোর করে রাখবে। এবং দ্বিতীয় বিবাহের চিন্তা মনের মধ্যে মোটেও স্থান দেবে না।
এমনকি যে সমস্ত অল্পবয়সী তরুণী বিবাহের পরে স্বামীর সাথে একত্রে সহবাস করার সুযোগও পায়নি, স্বামী মারা যাওয়ার পর তারাও অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে না বলে বিধান দেওয়া আছে।
এই সমস্ত কারণে হিন্দু সমাজের বিধবাদের বিবাহ না দেওয়ার প্রথাটাই বেশি করে প্রচলিত হয়ে যায়। এমনকি আধুনিক হিন্দুশাস্ত্রকার দয়ানন্দ সরস্বতী, আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা, লিখেছেন— মানুষের জন্য দ্বিতীয় বিবাহ করা উচিতই নয়।
কিন্তু আধুনিক সংস্কারক যেমন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রাণান্তকর প্রচেষ্ট চালিয়েছিলেন যাতে বিধবা বিবাহের প্রচলন করে হিন্দুসমাজের বিধবাদের করুণ অবস্থায় অবসান ঘটানো যায়। অবশেষে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই ব্রিটিশ সরকার হিন্দু সম্প্রদায়ের বিধবা বিবাহকে আইনসঙ্গত বলে ঘোষণা করে।
এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।