তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন | তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত বাংলাই।
হে বস্ত্রাবৃত!রাত্রিতে দন্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম, অথবা তদপেক্ষা বেশী এবং কোরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্টভাবে। আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী।
নিশ্চয় এবাদতের জন্যে রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয় দিবাভাগে রয়েছে আপনার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। ( সূরা আল-মুযযাম্মিল ৭৩/ ১-৭)
আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি এবাদতের জন্যে দন্ডায়মান হন রাত্রির প্রায় দু’তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দন্ডায়মান হয়। আল্লাহ দিবা ও রাত্রি পরিমাপ করেন।
তিনি জানেন, তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পার না। অতএব তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরায়ন হয়েছেন। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর।
তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জেহাদে লিপ্ত হবে।
কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর। তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও।
তোমরা নিজেদের জন্যে যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। ( সূরা আল-মুযযাম্মিল ৭৩/ ২০)
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল।
আয়েশা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তাহাজ্জুদের নামাজ কে সূরা আল-মুযযাম্মিল এর প্রথমাংশে ফরয করেছিলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণ ১ বৎসর পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করলেন, যাতে তাঁদের পা ফুলে গেল।
আল্লাহ তা‘আলা উক্ত সূরার শেষাংশের নাযিল করা ১২ মাস পর্যন্ত স্থগিত রেখেছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা উক্ত সূরার শেষাংশে সহজীকৃত বিধান অবতীর্ণ করলেন।
অতএব তাহাজ্জুদের সালাত ফরয হিসাবে অবতীর্ণ হওয়ার পর নফল হিসাবে অবশিষ্ট রয়ে গেল। সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১৬০১
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম।
একজন জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ম কি? তিনি বললেনঃ দু’ দু’ রাক’আত করে। আর ফজর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলে এক রাক’আত মিলিয়ে বিত্র করে নিবে। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১১৩৭
তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ফজরের দু’ রাক’আত (সুন্নাত) বাদে ৭ বা ৯ কিংবা ১১ রাক’আত ( বিতর সহ) । সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১১৩৯
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়।
আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ্ তা’আলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব।
কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে। আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১১৪৫ তাই রাত্রিকে তিন ভাগ করে, শেষের এক ভাগে তাহাজ্জুদের নামাজের উত্তম সময়।
তাহাজ্জুদ নামাজ কি প্রতিদিন পড়তে হয়।
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন- হে ‘আবদুল্লাহ ! তুমি অমুক ব্যক্তির মত হয়ো না, সে রাত জেগে ‘তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তো, পরে রাত জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া ছেড়ে দিয়েছে। আবূ সালামা (রাঃ) হতেও এ রকম বর্ণিত আছে। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১১৫২
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহ্র কাছে সর্বাধিক প্রিয় ‘আমাল কি? তিনি বললেনঃ যে ‘আমাল সদাসর্বদা নিয়মিত করা হয়। যদিও তা অল্প হয়। তিনি আরও বললেন, তোমরা সাধ্যের অতীত কাজ নিজের উপর চাপিয়ে নিও না। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৪৬৫
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত।
তাহাজ্জুদ নামাজে নিয়ত করার কোন দোয়া নেই। আপনি যখন থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য মনস্থির করাবেন, তখন থেকে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত সম্পূর্ণ হল।
তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়।
তাহাজ্জুদ নামাজে যে কোন সূরা পড়া যাই। খেয়াল রাখতে হবে যে সূরা ধিরস্থির ও সুন্দর করে পাঠ করতে হবে। তাহাজ্জুদ নামাজে বড় বড় সূরা গুলো পাঠ করা বেশী উত্তম। আপনি চাইলে ছোট সূরা পাঠ করেও তাহাজ্জুদ নামজ পড়তে পারেন।
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম।
কেবল মাত্র তাহাজ্জুদের নামাজ না, সকল নামাজের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের নামাজ সম্পূর্ণ এক। কিন্ত কিছু আলেমের মতে পুরুষ ও মহিলাদের নামাজ ভিন্ন। আর এই ভিন্ন নামাজের কোন হাদিস নেই। তাই এই ক্ষেত্রে আপনাকে বিশ্লেষণ করে নির্ণয় নিতে হবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজাত।
আপনি চাইলে তাহাজ্জুদ নামাজের পর মোনাজাত করতে পারেন। বা নামাজের মধ্যে সিজদায় গিয়ে দোয়া করতে পারেন। অথবা শেষ বৈঠকে সালাম ফিরার আগে দোয়া করতে পারেন।
এক কথাই তাহাজ্জুদের নামাজের সময় দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। তাই অবশ্যয় তাহাজ্জুদের নামাজের সময় মোনাজাত বা দোয়া করুন।
এই আর্টিকেল গুলো পড়ুন।