মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ। ভাগ্য সম্পর্কে কুরআন কী বলে।
ইসলামধর্মে তকদির বা ভাগ্য।
ইসলামধর্মে আছে, মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি সর্বশক্তিমান কর্তক পূর্বনির্ধারিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোথায় এবং কখন একজন মান জন্মাবে, জন্মলগ্নে তার চারপাশের পরিবেশ কেমন হবে, কতদিন সে বাঁচবে এস, কোথায় তার মৃত্যু হবে সবই স্রষ্টা আগে থেকেই নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।
বর্তমান পরিস্থিতিগুলি এক-একটি পরীক্ষাস্বরূপ।
কার্যক্ষমতার ভিত্তিতে বিচার হবে।
এই পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের পরীক্ষা হবে। কিন্তু সমস্ত ব্যক্তির একই রকম পরীক্ষা হবে না। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এবং সম্পদের নিরিখে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পরীক্ষা হবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শিক্ষক যদি খুব জটিল প্রশ্ন করেন, তাহলে খাতা দেখা হয় অনেকটা সহানুভূতির সঙ্গে। কিন্তু প্রশ্ন যদি সহজ হয়, তাহলে খাতা দেখা হয় কঠোর ভাবে।
এই পৃথিবীতে ধনি এবং দরিদ্র এই দুই শ্রেণির মানুষ আছে। ইসলাম প্রতিটি ধনি মুসলমানকে যাকাত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সাহেৰে নেসাব অর্থাৎ যার কাছে ৭৫ গ্রাম সোনা আছে বা ওই পরিমাণ অর্থ আছে তাকে যাকাত বা Poor Tax দিতে হবে।
বছরে মাত্র একবার তার উদ্বৃত্ত অর্থ থেকে শতকরা ২.৫০ টাকা । তাঁকে দিয়ে দিতে হবে গরিব আত্মীয়-স্বজনকে অথবা দীন-দুঃখীকে।
অর্থাৎ Poor-কে Poor Tax দিতে হয় না। যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক ধনি নম্বর (পুণ্য) পাবেন, আবার অনেক ধনি পাবেন না। গরিবরা কিন্তু এ ব্যাপারে পরিপূর্ণ নম্বর পাবেন।সমস্ত মানুষ সর্বদা ধনি হতে চায়, কেউ কখনও গরিব হতে চায় না।
কেউ ধনি ব্যক্তির প্রশংসা করতে পারেন, গরিবের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে পারেন। কিন্তু তিনি জানেন না যে যাকাত অমান্যকারী ধনির সম্পদই ধনিকে নরকে।
দেবে আর দারিদ্র্যই হয়তো গরিবকে নিয়ে যাবে জান্নাতে। আবার বিপরিদ টা সত্য হতে পারে। দানশীলতা ও বিনয়ের কারণে ধনি ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারেন।
অন্যদিকে অর্থের চরম আকাঙ্ক্ষা এবং সেই আকাঙ্ক্ষাকে পরিতৃপ্তির অবৈধ উপায়ের জন্য গরিব জাহান্নামে যেতে পারেন।
বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম পিতা-মাতার জন্য একটি পরীক্ষাস্বরূপ।
কখনও কখনও সুগঠিত সুন্দর শিশুর জন্ম হতে পারে, কখনও কখনও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হতে পারে। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিটি শিশুই ‘মাসুম’—পবিত্র। পূর্বজীবনের পাপের বোঝা বহন করে একটা ফুলের মতো নিস্পাপ শিশু কখনও বিকলাঙ্গ হতে পারে না।
আর শিশুর বিকলাঙ্গতার দোষ শিশুর উপর চাপিয়ে দিলে শিশুর পিতা-মাতার মধ্যে দানশীলতার স্পৃহা তৈরি হয় না। কারণ তারা জানেন শিশু তার পূর্বজন্মের ‘খারাপ কর্মের বোঝা বইছে।
ইসলাম কিন্তু পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, শিশুর বিকলাঙ্গতা শিশুর পিতামাতার জন্য একটি পরীক্ষাস্বরূপ। বিকলাঙ্গ সন্তান পেয়েও তারা স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে পারে কিনা সর্বশক্তিমান স্রষ্টা সেটা দেখতে চান। তিনি দেখতে চান তারা ধৈর্যধারণ করতে পারে কিনা।
একটি প্রবাদ আছে-‘একটা মানুষ জুতো নেই বলে ততক্ষণই দুঃখ প্রকাশ করে যতক্ষণ না সে দেখে একটি মানুষের দুটো পা নেই।
‘সূরা আনফাল’-এ আছে “এবং জেনে রাখো যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো এক পরীক্ষা এবং নিশ্চয়, আল্লাহর নিকটে রয়েছে মহা পুরস্কার।” (৮ নং সুরা : আয়াত ২৮)
পার্থিব ওই সমস্ত উপকরণের মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন। তিনি কোনও কোনও মানুষকে বিকলাঙ্গ সন্তান দিয়ে দেখতে চান, তারা এই দুর্বিসহ পরিস্থিতির মধ্যে স্রষ্টাকে স্মরণ করে কি না।
কারণ এই ধৈর্যের পরেই আছে সর্বোচ্চ পুরস্কার—জান্নাতুল ফিরদৌস। সাধারণ একটি নিয়ম আছে, পরীক্ষা যত কঠিন হবে, পুরস্কার তত উচু হবে।
কলা বিভাগে কেউ যদি স্নাতক হন তাহলে তাকে বলা হয় বি, এ, পাস। বাণিজ্য বিভাগে কেউ যদি স্নাতক হন তাহলে তাকে বলা হয় বি. কম. পাস।
কিন্তু মেডিকেল সায়েন্সে কেউ যদি স্নাতক হন তাহলে তিনি অসাধারণ সম্মান লাভ করেন—তার নামের আগে লেখা হয় ডা. এবং নামের পরে লেখা হয় ডিগ্রি। " একইভাবে সর্বশক্তিমান আল্লাহ বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। কাউকে সুস্বাস্থ্য দান করেন, কাউকে দান করেন ব্যাধি।
কাউকে দান করেন সম্পদ, কাউকে দান করেন দারিদ্র। কাউকে দান করেন বেশি বুদ্ধি, কাউকে দান করেন কম বুদ্ধি। আর এভাবেই তিনি প্রতিটি মানুষকে আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষা করেন।
বস্তুত পার্থিব এই জীবন পরকালের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। মৃত্যুর পরের জীবন ও জগৎ সম্পর্কে কোরআন ও বেদে স্পষ্ট নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে।
পূর্বজন্মের ‘কর্মফলের কথা অপেক্ষাকৃত নবীন ও মনুষ্যরচিত ভারতীয় ধর্মগ্রন্থগুলিতে লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু এই কর্মফল, পুনর্জন্ম এবং বারে বারে ফিরে ফিরে আসার কথা বেদে নেই, ইসলামেও নেই।
ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য - সূচিপত্র।
- ভুমিকা।
- ১) ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা।
- ২) সংক্ষেপে ইসলাম ধর্মের পরিচয়।
- ৩) সংক্ষেপে হিন্দু ধর্মের পরিচয়।
- ৪) ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের ঈমান বা বিশ্বাসের সরূপ।
- ৫) হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর ও আল্লাহ্ সম্পর্কে ধারণা।
- ৬) ইসলাম ধর্মে ঈশ্বর ও আল্লাহ্ সম্পর্কে ধারণা।
- ৭) হিন্দু ও ইসলাম ধর্মে দেবদূত বা ফেরেশতার ধারণা।
- ৮) হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের গ্রন্থ সমূহ।
- ৯) হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের মহাপুরুষ বা অবতার।
- ১০) ঈশ্বর বা আল্লাহর গুণাবলি।
- ১১) হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে মুহাম্মাহ (সাঃ)।
- ১২) ইসলাম ও হিন্দু ধর্মে মৃত্যুর পরের জীবন।
- এখন পড়লেন --- হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের ভাগ্য বা নিয়তি।
- ১৪) হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের ঈশ্বরের প্রার্থনা।
- ১৫) জিহাদ সম্পর্কে ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম কি বলে।
- ১৬) ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন উপদেশের মধ্যে সাদৃশ্য।
- ১৭) উপসংহার।